FX.co ★ SaifulRahman | বাজেটের আকার কমতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা
বাজেটের আকার কমতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা
গত দেড় দশকে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণনির্ভর বড় আকারের বাজেট দেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর পাশাপাশি লুণ্ঠনের অন্যতম উৎসও ছিল বড় অংকের এ বাজেট। উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের সরকারের প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতি বছরই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হওয়ার কারণে সংশোধনের মাধ্যমে এর আকার কমাতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গতকাল আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত দুটি সভায় অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আবদুর রহমান খান, অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি গণমাধ্যমের কাছে সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে ঘাটতি বাজেট। এ ঘাটতি মেটানোর কথা ব্যাংকসহ দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে এডিপি হিসেবে। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কেবল সুদ পরিশোধ বাবদ সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গতকালের সভায় চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য অর্থবছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো বাজেট কমানো হলেও এবার সেটি ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। সাম্প্রতিক বন্যা এবং জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটির জন্য সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। পাশাপাশি সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় বাড়বে। এসব কারণে এবার বাজেটের আকার খুব বেশি কমানো সম্ভব হবে না। পাশাপাশি আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকারও বাড়বে। এর পরিমাণ ৮ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট কত হতে পারে, সে বিষয়ে সামনের বছরের এপ্রিলে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এবার সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। তবে আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির পাশাপাশি চীন ও ভারতের মূল্যস্ফীতি কমে আসার কারণে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তাছাড়া ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকার প্রক্ষেপণের কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সেই সঙ্গে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য আনার বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণে আগামী অর্থবছরের পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এর মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে ৬ শতাংশ এবং এর পরের অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ৪ শতাংশ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সাড়ে ৪ শতাংশ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছে।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা যাতে সচল থাকে সেটিও নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এজন্য আইএমএফ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণ অনুসারে, চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর আগামী অর্থবছরে এটি ৬ শতাংশ ছাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার গ্রামাঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাইছে।
* এখানে পোস্ট করা মার্কেট বিশ্লেষণ মানে আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু একটি ট্রেড করার নির্দেশনা প্রদান করা নয়