সোমবার, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর আরোপিত শুল্ক নিয়ে খানিকটা পিছু হঠার ইঙ্গিত দেন তখন মার্কেটে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল। এতে মনে হতে পারে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন পিছু হটছেন। কিন্তু আসলেই কি তাই?
স্পষ্টতই, এই শুল্কসংক্রান্ত বিশৃঙ্খলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে, যা মূলত চীনকে লক্ষ্য করে করা হলেও ইউরোপ ও ভারতও এর আওতায় এসেছে। এই দুটি অঞ্চল ঐতিহ্যগতভাবে দুর্বল এবং এখনও ওয়াশিংটনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ট্রাম্পের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে মার্কেটের স্পেকুলেটররা স্বাগত জানিয়েয়েছে, এবং কম্পিউটার, কম্পোনেন্টস ও কনজিউমার ইলেকট্রনিকসের ওপর উচ্চ শুল্ক স্থগিত রাখার পদক্ষেপ প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট তৈরি করেছে—যা অন্যান্য সেক্টর এবং বৈশ্বিক ফিনান্সিয়াল মার্কেটেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু আসলেই কি ট্রাম্প পিছু হটছেন, এবং তার বাণিজ্যযুদ্ধ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে বা শুধুই বেইজিংকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে?
এর আগের এক বিশ্লেষণে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্টের এক বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইল উল্লেখ করেছিলাম, যা আমেরিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রাখছে। আমরা তা পছন্দ করি বা না করি—এটাই বাস্তবতা। এখন এটি পরিষ্কার যে ট্রাম্প কৌশল পরিবর্তন করছেন। সহজভাবে বললে, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যাবতীয় উপায় অবলম্বন করবেন—তা ন্যায্য হোক বা অন্যায্য। তিনি প্রতিশ্রুতি দেবেন, ভাঙবেন, পরিস্থিতির মোড় ঘোরাবেন, এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এটা আমেরিকান রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অংশ এবং দেশটির প্রেসিডেন্টদের জন্য স্বাভাবিক আচরণ। তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যে চীন এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে। একবার চাপ কমবে, আবার বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে এবং এটি মার্কেটের গতিপথে কী প্রভাব ফেলবে?
মনে হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন, তাই দীর্ঘমেয়াদি আশাবাদের সম্ভাবনা ক্ষীণ। স্থানীয় পর্যায়ে শেয়ারবাজারের যেকোনো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সম্ভবত বাণিজ্যযুদ্ধের অনিশ্চয়তার ছায়াতেই থাকবে। শীঘ্রই আয়ের প্রতিবেদন পেশের মৌসুম শুরু হতে চলেছে, যা কিছুটা স্পষ্টতা দিতে পারে। হ্যাঁ, মার্চে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে—যা এখনো এর সম্পূর্ণ প্রভাব মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় নয়—তবে যদি বড় কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তাহলে স্টক মার্কেটের পক্ষে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া কঠিন হবে।
কমোডিটি মার্কেটেও অনুরূপ চিত্র দেখা যেতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোও চাপে থাকবে, কারণ এগুলো বাণিজ্যযুদ্ধ সংক্রান্ত গুজব ও ঘটনাপ্রবাহের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। আর মার্কিন ডলারের ক্ষেত্রে, গত সপ্তাহের দরপতনের পরে এটি এখন 100.00 এর গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজিক্যাল লেভেলের নিচে কনসোলিডেট করছে।
আমি ট্রাম্পের তথাকথিত পিছু হটার বিষয়ে গভীর সন্দেহ পোষণ করি। আমার বিশ্বাস মার্কেটে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে তা বলা কঠিন। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছান ততক্ষণ এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে—অথবা তাঁর "মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন" নীতির ভিত্তি নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও বাড়তে থাকা প্রতিরোধে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
দৈনিক পূর্বাভাস:
#SPX
S&P 500 ফিউচারস CFD বর্তমানে 5397.70 লেভেলের আশেপাশে ট্রেড করছে। যদি এটি এই লেভেল থেকে রিবাউন্ড করতে ব্যর্থ হয় এবং ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট পুনরায় শুরু না করে, তাহলে মার্কেট সেন্টিমেন্টের অবনতি ঘটলে এটি 5148.55 লেভেলের দিকে লোকাল রিভার্সাল ও দরপতন হতে পারে। যদি সূচকটির দর 5369.56 লেভেলের নিচে নেমে যায় তাহলে মার্কেটে বিক্রির প্রবণতা শুরু হতে পারে।
বিটকয়েন
এই টোকেনটি বর্তমানে 86088.50 লেভেলের নিচে ট্রেড করছে। মার্কেট সেন্টিমেন্টের অবনতি হলে এখানে একটি রিভার্সাল ঘটতে পারে এবং মূল্য 82120.85 লেভেলের দিকে হ্রাস পেতে পারে। যদি মূল্য 85095.00 লেভেল ব্রেক করে নিচের দিকে নামে তাহলে বিটকয়েন বিক্রির প্রবণতা শুরু হতে পারে।