এই সপ্তাহের শেষের দিকে, ইউরো কিছুটা লোকসান পুনরুদ্ধার করতে এবং বৃদ্ধি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে, দুর্বল উর্ধ্বমুখী প্রবণতা কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে সে বিষয়ে বিশ্লেষকগণ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে মার্কিন ডলার পিছিয়ে পড়েছে, এবং এটি লুকানো মজুদে হাত দিতে পারে।
বুধবার, স্টক মার্কেটে ঝুঁকিগ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরো প্রায় 1% বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও ইউরোপীয় মুদ্রার দাম বাড়তে থাকে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে পণ্যদ্রব্যের দামে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা গেলেও এগুলোর দাম সাম্প্রতিককালের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিচে নেমে গেছে।
ইউরো বৃহস্পতিবার লাভ ধরে রেখেছে, ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি প্রদর্শন করছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ তুরস্কে আলোচনা করছেন, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা যুদ্ধের সমাপ্তি এবং শান্তি ফিরে আসার প্রত্যাশা করছেন। EUR/USD পেয়ারের মূল্য হারানো অবস্থান কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে এবং বর্তমানে 1.1058 এর কাছাকাছি অবস্থান করছে।
পণ্যের মূল্যপতন এবং ঝুঁকিগ্রহণের মাত্রা বাড়ায় ইউরো সমর্থন খুঁজে পেয়েছে। উপরন্তু, অপরিশোধিত তেলের দামে সামান্য হ্রাস বাজারে আতঙ্ক কমিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজারের অবস্থার উপর ইউরোর গতিশীলতা নির্ভর করবে।
রাশিয়ার তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হলে ইউরোপীয় বাজারসমূহ তীব্রভাবে হ্রাস পাবে। ইইউ এখন পর্যন্ত বিকল্প জ্বালানি সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে পারেনি।অপরিশোধিত তেলের দাম ইউরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতিকে 10% এর উপরে ঠেলে ব্যারেল প্রতি $300 হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এর ফলে একটি দীর্ঘ মন্দা শুরু হবে।
ইউরোর তুলনায় মার্কিন ডলার শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। উপরন্তু, মার্কিন ডলার ফেড সুদের হার বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করছে। উল্লেখ্য যে ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সপ্তাহে সুদের হার বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বুধবার সন্ধ্যায় ইউরোর বিপরীতে কিছুটা পিছু হটলেও, মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার, মার্কিন ডলার মিশ্র ফলাফলের সাথে বর্তমান স্তরে একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গত সপ্তাহের উর্ধ্বগতির পর, আমেরিকান মুদ্রা বৃহস্পতিবার এটির নিম্নমুখী সংশোধন অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন ডলার ঊর্ধ্বগতি বজায় রেখেছে এবং দীর্ঘমেয়াদে উত্থানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে শান্ত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ এড়িয়ে চলায় চলতি সপ্তাহ জুড়ে ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলার 3% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রাউন ব্রাদার্স হ্যারিম্যানের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমেয়াদে নিরাপদ বিনিয়োগক্ষেত্রে সম্পদ ছেড়ে দেওয়ার কারণে মার্কিন আরও বৃদ্ধি প্রদর্শন করতে পারে। 16 মার্চের বৈঠকে আর্থিক নীতিমালায় ফেডের কঠোরতা আরোপের প্রত্যাশাও মার্কিন ডলারের বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
তবে, এইচএসবিসির বিশ্লেষকরা বলছেন ফেড মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন না নিয়ে আসলে মার্কিন ডলার সমর্থন নাও পেতে পারে। বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "ফেড আর্থিক নীতিমালা রিবর্তন না করলে সেটি মার্কিন ডলারের উপর কম প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ স্বল্পমেয়াদে সুদের হার বৃদ্ধির প্রত্যাশা এবং ফেডের টার্মিনাল রেট মার্কিন ডলারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি করেছে৷"
এইচএসবিসির বিশ্লেষণের উপসংহারে এসেছে যে, "দুটি আন্তঃসংযুক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে মার্কিন ডলারের বর্তমান গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো হল চলমান ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ঝুঁকি। প্রথমটি অনিবার্য, এবং দ্বিতীয়টি জ্বালানি মূল্যের দ্রুতবৃদ্ধির কারণে ঘটছে। সুতরাং মার্কিন ডলারে স্থিতিশীলতার খুব কমই সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাই, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে মার্কিন ডলারের প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়েছে,"৷