logo

FX.co ★ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি 8.0% -এর উপরে পৌঁছেছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি 8.0% -এর উপরে পৌঁছেছে

অনেক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি বলেছেন যে ফেব্রুয়ারীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশেষ করে জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার পরে, অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ঘটতে যাচ্ছে তারই সূচনালগ্ন হচ্ছে 8.0% -এর মূল্যস্ফীতি।

আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্য সূচকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। গত তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি 7.8% হবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা 1982 সালের পর থেকে সর্বোচ্চ স্তর। কিন্তু ইতিমধ্যেই কিছু বিশ্লেষক আত্নবিশ্বাসের সাথে পূর্বাভাস দিয়েছেন যে মূল্যস্ফীতি 8.5% এর কাছাকাছি হবে এবং এটিই শেষ নয়, বরং ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম ও দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যার কেবল শুরু।

ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশ কর্তৃক অবিলম্বে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হয়েছিল তা জ্বালানির দামকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে খুব দ্রুতই মূল্যপতনের আশা করা বেশ কঠিন। রাশিয়ার অর্থনীতির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পণ্য বাজারের অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রভাব ফেলবে। কারণ কার্যত সমগ্র ইউরোপীয় মহাদেশ অর্থনীতির স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য সরাসরিভাবে রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি 8.0% -এর উপরে পৌঁছেছে

ধারণা করা যাচ্ছে যে আগামী ছয় মাস তেল ও গ্যাসের বাজারে অনেক অস্থিরতা দেখা দিবে। প্রকৃত দাম কত এবং নিষেধাজ্ঞা ও স্পেকুলেটরদের প্রভাব কোথায় তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আমেরিকানরা ইতিমধ্যে বহু-বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে যার ফলে সম্পূর্ণ বেতন দিয়েও খরচ চালানো যাচ্ছে না এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ইতিমধ্যেই খাদ্যপণ্যের দামকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং গ্যাস গড় দাম গ্যালন প্রতি $4.25-এ পরিণত হয়েছে। কিছু রাজ্যে, গ্যাসের দাম $5 ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানির দাম আরও বাড়তে থাকবে, কারণ গতকাল জানা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

হাউজ অভ রিপ্রেজেন্টেটিভ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, গ্যাসোলিন এবং কেরোসিনের মতো পরিশোধিত পণ্য আমদানিতে নিষিদ্ধ করে একটি নতুন বিল পাশ করেছে। বিলটি গৃহীত হওয়ার 45 দিন পরে কার্যকর হবে। আমেরিকান রাজনীতিবিদদের মতে, এটি ইউক্রেন ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান শুরু করার পরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়াস্বরপ করা হয়েছে। বাইডেনের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, রাশিয়া একটি আদেশ জারি করেছে যে দেশটি নির্দিষ্ট পণ্য এবং কাঁচামালের বাণিজ্য কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করবে, তবে এক্ষেত্রে কোন বিভাগের পণ্য তালিকাভুক্ত করা হবে সে বিষয়ে মূল বিবরণে কোন কিছুর উল্লেখ করা হয়নি।

কিছু অর্থনীতিবিদ ইতিমধ্যেই স্বীকার করছেন যে তেলের বাজারের অস্থিরতা মার্কিন প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে। তবে শক্তিশালী শ্রমবাজার এবং কোভিড-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে হ্রাস করার জন্য যথেষ্ট হবে না। আগামী সপ্তাহের শুরুতে, ফেডারেল রিজার্ভ 2018 সালের পর প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম শুধুমাত্র চলতি বছরে এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি চক্রে অনিশ্চয়তা যোগ করবে।

বৃহস্পতিবারে প্রকাশিতব্য ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআইয়ের প্রতিবেদনে, তেলের দামের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি প্রতিফলিত হবে। তবে তেলের মূল্য বৃদ্ধির বেশিরভাগ প্রভাব আগামী মাসগুলোতে দৃশ্যমান হবে, কারণে জ্বালানি পণ্যের সক্রিয় মূল্য বৃদ্ধি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ঘটেছে৷ উল্লেখ্য যে এই প্রতিবেদনে গাড়ি, বাড়ির আসবাবপত্র এবং আবাসন খাতের মূল্য বৃদ্ধির ইঙ্গিতও দেবে। ইতিমধ্যেই, বাড়িভাড়া সহ আবাসনের খরচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, এবং এই প্রবণতা অদূর ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন যে ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে 7% এর তুলনায় বার্ষিক ভিত্তিতে ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই প্রবৃদ্ধি গড়ে 7.7% হবে। ভোক্তা মূল্য সূচক গত তিন মাসে 4.5% বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে 1 শতাংশের বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি 8.0% -এর উপরে পৌঁছেছে

বিশেষজ্ঞরা আরও লক্ষ করেছেন যে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তেলের দামের অনুরূপ বৃদ্ধির মতো সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির উপর এত বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে, ভোক্তাগণ ইতিমধ্যেই সুস্পষ্টভাবে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কারণ তাদের পরিকল্পনার চেয়ে দ্রুত অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ভোক্তাগোষ্ঠীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ খাদ্য এবং পেট্রলের মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে দৈনন্দিন খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে এই অংশটি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

খাদ্য এবং গ্যাসের উচ্চ খরচ ছাড়াও, আমেরিকানরা একই সাথে উচ্চ বাড়িভাড়া এবং ইউটিলিটি বিল নিয়ে ভুগছে। বারক্লেস পিএলসির অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন যে 2023 সালের শেষ প্রান্তিকের জন্য বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে বছরে 0.3 শতাংশ হারে ব্যবহার বৃদ্ধি হ্রাস করবে। এটিও প্রত্যাশিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মনোভাব নতুন পর্যায়ে নেমে আসবে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, মার্চের শুরুতে এটি দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম স্তরে রয়েছে। প্রতিবেদনটি আজ শুক্রবার প্রকাশ করা হবে বলে নির্ধারণ করা রয়েছে।

বারক্লেস পিএলসির অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে গত কয়েক দশকের তুলনায় বর্তমানে তেলের দামের পরিবর্তনের ফলে মার্কিন অর্থনীতি অনেক কম প্রভাবিত হয়। সৌভাগ্যবশত, এমন সময়ে জ্বালানির দাম বেড়েছে যখন মার্কিন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী এবং দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য যে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার বা মার্কিন শ্রম বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, গত মাসে 678,000 টি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, এবং বেকারত্বের হার প্রাক-মহামারী স্তরের কাছে পৌঁছেছিল। এবং যখন মহামারী জন্য প্রণোদনা কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়েছে, গ্রাহকদের কাছে এখনও অতিরিক্ত সঞ্চিত অর্থ রয়েছে । নেতিবাচক দিক হল কর্মীদের মজুরি মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমতে পারে।

EURUSD পেয়ারের প্রযুক্তিগত চিত্র

ইউরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশিত বৃদ্ধির সাথে সাড়া দিচ্ছে এবং ট্রেডাররা দ্রুত মুনাফা নির্ধারণ করছে। যদিও ইউরোর বুলিশ প্রবণতা 1.1100 -এর কাছাকাছি রেজিস্ট্যান্স ফিরে এসেছে, যা এই ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টের চাহিদা বজায় রেখেছে। তবে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী সম্ভাবনাকে সীমিত করবে। ইউরোর ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্য 1.1140 এর উপরে একত্রিত করতে হবে, যা আরও উচ্চস্তরে সংশোধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা স্তর হবে 1.1230 এবং 1.1310-এর স্তর। এই পেয়ারের মূল্য হ্রাস পেলে 1.1000 -এর স্তরে সক্রিয় ক্রয়ের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে, 1.0880 এর স্তরটি মূল সাপোর্ট স্তর হিসেবে রয়ে গেছে।

GBPUSD পেয়ারের প্রযুক্তিগত চিত্র

এই পেয়ারের মূল্যের সাম্প্রতিক পতনের পরে পাউন্ডের ক্রেতাদের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে এবং তারা এখন 1.3194 এর রেজিস্ট্যান্সের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। উল্লিখিত স্তর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলে আমাদের 1.3240 এবং 1.3320 এর স্তরে এই পেয়ারের আরও শক্তিশালী সংশোধনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। তবে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.3140 এর নিচের স্তরে চলে যায়, তাহলে এই ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টের উপর চাপ বাড়বে। এক্ষেত্রে, আমরা পুনরায় এই ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টের 1.3085-এর স্তরে পতন এবং নতুন করে আরও নিম্নস্তরে চলে যাওয়ার আশা করতে পারি। এক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3030 এবং 1.2920-এর স্তর।

* এখানে পোস্ট করা মার্কেট বিশ্লেষণ মানে আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু একটি ট্রেড করার নির্দেশনা প্রদান করা নয়
Go to the articles list Go to this author's articles Open trading account