EUR/USD পেয়ারের মূল্য স্থবির অবস্থায় রয়েছে। কেন মার্কিন ডলারের নিম্নমুখী প্রবণতা থেমে গেল?

রাজনৈতিক ও মৌলিক পটভূমি সাধারণত সীমিত সময়কাল ধরে প্রভাব বিস্তার করে—এগুলোর প্রভাবের মাত্রা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, বরং প্রভাবের স্থায়িত্ব খুব বেশি হয় না। মার্কেটের ট্রেডাররা রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রতি তীব্র এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেগুলো দ্রুত বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের মূল্যে প্রতিফলিত হয়। এ ধরনের ঘটনা যত ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে তত দ্রুতই এই প্রভাব ম্লান হয়ে যায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। তবে, এক্ষেত্রে, সংবাদটির প্রভাব এত তীব্র ছিল যে এর পরবর্তী প্রভাব প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান ছিল, বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রশাসনে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো মার্কেটে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবে, সেই দুই সপ্তাহ শেষ হয়েছে এবং মার্কেটে এই প্রভাব ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব ফিকে হয়ে গেছে, যার ফলে মার্কিন ডলার সূচক নিম্নমুখী হয়েছে, যা ডলারের চাহিদার পতনকে প্রতিফলিত করে। ডলারের প্রধান পেয়ারগুলোর মূল্য সেই অনুযায়ী সমন্বয় করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা উল্লেখযোগ্যভাবে ১০০-পয়েন্টের কারেকশন ঘটিয়েছে। এখানে "কারেকশন" শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান মৌলিক পটভূমি এখনও এই পেয়ারের মূল্যের স্থায়ী বৃদ্ধির সম্ভাবনা নির্দেশ করে না—শুধু ট্রাম্পের আবার খবরের শিরোনামে আসার সম্ভাবনা থাকার জন্য নয় বা ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর অবস্থানের কারণে নয়, বরং ইউরোর সম্ভাব্য দুর্বলতার কারণে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীর বিজয়ের পরে, ডিসেম্বরের সভায় ইসিবির সুদের হার ৫০-বেসিস-পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা কমে গিয়েছিল, এবং মার্কেটের ট্রেডাররা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকির দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। তবে, এখন ট্রেডারদের দৃষ্টি মুদ্রাস্ফীতি উদ্বেগ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবুও, সুদের হার ৫০-বেসিস-পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা এখনও আলোচনায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসিবির সদস্য গ্যাব্রিয়েল মাখলুফ (আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর) সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন যে এমন একটি পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর জন্য "জোরালো কারণের" প্রয়োজন হবে।

আমার মতে, PMI সূচকের দুর্বল ফলাফল এখানে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে পারে। এই প্রতিবেদন এই শুক্রবার (২২ নভেম্বর) প্রকাশিত হবে, যার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ইসিবির ডিসেম্বরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যদি এই প্রতিবেদনটির ফলাফল নেতিবাচক হয়, তাহলে ইসিবির সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে, যা ইউরোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।

জার্মানির সামষ্টিক প্রতিবেদনের ওপরও ট্রেডারদের বিশেষ নজর থাকবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, নভেম্বরে জার্মানির উৎপাদন সংক্রান্ত PMI সূচক সামান্য নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অক্টোবরের স্তরের কাছাকাছি অবস্থান করবে (অক্টোবরে ৪৩.১ এর বিপরীতে ৪৩.০)। দেশটির পরিষেবা সংক্রান্ত PMI সূচক ৫০-পয়েন্টের ওপরে সামান্য বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে (আগের মাসে ৫১.৬ বিপরীতে ৫১.৮ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে)। এটি সাধারণ পূর্বাভাস, তবে সব বিশ্লেষক এ ব্যাপারে একমত নন। উদাহরণস্বরূপ, ING-এর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে জার্মানির প্রতিবেদনের ফলাফল এই পূর্বাভাসের চেয়ে কম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, ডলারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে নয় বরং ইউরোর দুর্বলতার কারণে EUR/USD-এর দরপতন ঘটবে।

এদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের ডিসেম্বরে বৈঠকে সুদের হার হ্রাসে বিরতির বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। CME FedWatch টুল অনুযায়ী, ডিসেম্বরে সুদের হার অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা ৪০%-এ পৌঁছেছে। কিছু মুদ্রা কৌশলবিদ ইতোমধ্যে নিশ্চিত যে ফেডারেল রিজার্ভ পরবর্তী বৈঠকে সুদের হারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখবে। উদাহরণস্বরূপ, Nomura-র বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে ফেড অন্তত মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (এবং তারা মার্চ এবং জুনে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছেন)।

তবে আরেকটি পূর্বাভাস রয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকার বিশেষজ্ঞরা ডিসেম্বরে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছেন, যার পরে মার্চ এবং জুনে আরও দুইবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদের হার কমানো হবে বলে তারা ধারণা করছেন, তারপর ফেড ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত সুদের হার হ্রাসে বিরতি গ্রহণ করবে।

যদিও মার্কেটে ফেডের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে, একটি বিষয় স্পষ্ট: ফেডের ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন যে ফেড সুদের হার হ্রাসে বিরতি নেবে বা সুদের হার হ্রাস বন্ধ করবে, শুধুমাত্র এই সিদ্ধান্তের সময়কাল নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক চলমান রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কি EUR/USD পেয়ারের দর বৃদ্ধির সম্ভাবনা বজায় থাকবে?

আমার মতে, না। তাই এখনই প্রবণতার পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা করাটা ঠিক হবে না। একই সময়ে, EUR/USD-এর মূল্যের 1.1000 এর লেভেলের ব্রেকের জন্য কোনো মৌলিক প্রভাবকও নেই। অতিরিক্ত অনুঘটক প্রয়োজন—যেমন নিশ্চিতভাবে ইসিবির সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্টের হ্রাস (যা PMI প্রতিবেদনের হতাশাজনক ফলাফলের কারণে হতে পারে) বা ফেডের হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি। এই সপ্তাহে ফেডের নীতিনির্ধারকরা EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতাদের জন্য সমর্থন যোগাতে পারেন, যেখানে মিশেল বোম্যানের বক্তব্যের (২০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য) ওপর বিশেষ নজর থাকবে, যিনি সেপ্টেম্বরে সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্টের হ্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন কিন্তু অক্টোবরে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্টের হ্রাসের পক্ষে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। তার মন্তব্য EUR/USD পেয়ারের মূল্যের আরও বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

EUR/USD-এর ট্রেডিং কৌশল

যদি বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.0560 এর সাপোর্ট লেভেল ব্রেক করিয়ে নিচের দিকে নিয়ে যেতে পারে (H4 টাইমফ্রেমের মধ্যবর্তী বোলিঞ্জার ব্যান্ড লাইনে)তাহলে EUR/USD-এর শর্ট পজিশন ওপেন করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে, ইনস্ট্রুমেন্টটির মূল্য মধ্যবর্তী এবং নিম্ন বোলিঞ্জার ব্যান্ড লাইনের মধ্যে এবং সমস্ত ইচিমোকু সূচক লাইনের নিচে নেমে যাবে, একটি বিয়ারিশ "লাইন প্যারেড" সিগন্যাল গঠন করবে। নিম্নমুখী মুভমেন্টের ক্ষেত্রে মূল্যের প্রধান লক্ষ্য হল 1.0500 (চার ঘণ্টার চার্টে বোলিঞ্জার ব্যান্ডের নিম্ন লাইন)। 1.0400 এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ কারণ অস্পষ্ট মৌলিক পটভূমির কারণে বিক্রেতাদের জন্য এই পেয়ারের মূল্যকে 1.0500 লেভেলের নিচে রাখা কঠিন হবে।