এই সপ্তাহে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের আত্মবিশ্বাসী বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য যে প্রায় দুই বছর ধরে ইউরোর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে, এই মুভমেন্টকে পূর্ববর্তী দরপতনের বিপরীতে একটি কারেকশন হিসাবে দেখা যেতে পারে, যা পরবর্তীতে ফেডারেল রিজার্ভের আর্থিক নীতির নমনীয়করণের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের কারণে) প্রত্যাশায় ট্রেডারদের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে ঘটেছে । যাইহোক, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এবং ডলার আরও দুর্বল হয়ে গেছে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে যে এই কারণগুলো কতদিন ডলারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
আসুন এটি বিবেচনা করা যাক: একটি কারেকশন স্বাভাবিক হলেও, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের শুরুর সময়ের সাথে মিলে যায় তাই, এই একটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ইতোমধ্যেই এই পেয়ারের মূল্যের যথেষ্ট কারেকশন হয়েছে - সর্বোপরি, দুই বছর ধরেই এই পেয়ারের মূল্যের কারেকশন হয়েছে। গত সপ্তাহে, ফেড আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক নীতিমালা নমনীয় করা শুরু করে, তবুও ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। যদি মার্কেটের ট্রেডাররা আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা না করত, তাহলে কেন দুই বছর ধরে ডলারের দাম কমছে?
অবশ্যই, ফরেক্স মার্কেটে (এবং অন্য যেকোনো মার্কেট) সবকিছুই সরবরাহ এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে। বড় ট্রেডাররা (মার্কেট মেকাররা) সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বা মৌলিক পটভূমি নির্বিশেষে ট্রেড করতে পারে। সহজ কথায়, প্রাইভেট ট্রেডারদের বিপরীতে মূল্য বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন তাদের আছে। সাধারণত, মৌলিক পটভূমি — যা আর্থিক অবস্থা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে —যা প্রধান ট্রেডারদের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। যাইহোক, এই মুহুর্তে তেমনটি ঘটছে না।
ইউরোপীয় মুদ্রা ইসিবির নীতিমালা নমনীয়করণ দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। ইউরোপীয় অর্থনীতির অবস্থা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা প্রায় স্থবিরতার কাছাকাছি রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোজোনে বেকারত্ব বেশি রয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। যাইহোক, এই কারণগুলোর কোনটিই মার্কেটের ট্রেডারদের প্রভাবিত করছে বলে মনে হচ্ছে না, তাই আমাদের অবশ্যই প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের উপর ফোকাস করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত নিম্নগামী কারেকশনের পর, আবার এই পেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই পেয়ারের মূল্য ক্রিটিক্যাল লাইনের নিচে কনসলিডেট করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার অর্থ মধ্যমেয়াদী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, যা এখনও আগের, শক্তিশালী দরপতনের বিপরীতে একটি কারেকশন বলে মনে হচ্ছে।
COT রিপোর্টের বিশ্লেষণ১৭ সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ COT রিপোর্টে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশন অনেকদিন ধরেই বুলিশ ছিল। বিক্রেতাদের মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০২৩ সালের শেষার্ধে এবং ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের (লাল লাইন) নেট পজিশন হ্রাস পেয়েছে, যখন কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশন (নীল লাইন) বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রফেশনাল ট্রেডাররা আবার লং পজিশন বাড়াচ্ছেন।
আমরা এখনও ইউরোর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে সমর্থন করতে পারে এমন কোনো মৌলিক কারণ দেখতে পাচ্ছি না। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণও এই ইঙ্গিত দেয় যে এই পেয়ারের মূল্য কনসলিডেশন জোনে রয়েছে - অন্য কথায়, একটি সাইডওয়েজ রেঞ্জে রয়েছে। সাপ্তাহিক টাইমফ্রেমে, এটা স্পষ্ট যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে, এই পেয়ার 1.0448 এবং 1.1274 লেভেলের মধ্যে ট্রেড করছে। অন্য কথায়, আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্য সাত মাস ধরে অবস্থান করা রেঞ্জ থেকে 18 মাসের রেঞ্জের মধ্যে চলে এসেছে।
বর্তমানে, লাল এবং নীল লাইনগুলো ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যা নির্দেশ করে যে ইউরোর লং পজিশন বাড়ছে। যাইহোক, মূল্যের সাইডওয়েজ রেঞ্জে থাকার প্রবণতার মধ্যে, এই ধরনের পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্তের ভিত্তি হতে পারে না। গত সপ্তাহের রিপোর্ট অনুযায়ী, নন-কমার্শিয়াল গ্রুপের লং পজিশনের সংখ্যা 10,500 কমেছে, যেখানে শর্ট পজিশনের সংখ্যা 1,200 বেড়েছে। ফলস্বরূপ, নেট পজিশনের সংখ্যা 11,700 কমেছে। এখনও ইউরোর দরপতনের সম্ভাবনা আছে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ইভেন্টের পর্যালোচনাএই সপ্তাহে ইউরোজোনে কোনো উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট ছিল না। শুধুমাত্র মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু এটি এই সূচকের দ্বিতীয় অনুমানে ছিল, যার ফলাফল প্রথমটি থেকে খুব বেশি আলাদা ছিল না। শুক্রবার, ক্রিস্টিন লাগার্ড বক্তব্য দিয়েছেন কিন্তু তিনি নতুন কোনো তথ্য দেননি। এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ট্রেডারদের দৃষ্টি ফেডের বৈঠকের দিকেই ছিল। সোমবার থেকে শুরু করে, ফেডের "ডোভিশ" সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় ডলারের দরপতন শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তের পর বুধবারও সেই দরপতন অব্যাহত থাকে এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ডলার দুর্বল হতে থাকে। অন্য কথায়, মার্কেটে টানা পাঁচ দিন ধরে একই ইভেন্টের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফলে সামনের বেশ কিছুদিন ডলারের দরপতন অব্যাহত থাকতে পারে। মার্কেটের ট্রেডাররা ইতোমধ্যেই আসন্ন নন-ফার্ম পে-রোল এবং বেকারত্বের সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের হতাশাজনক ফলাফলের সম্ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করতে পারে এবং তারপরে অক্টোবরের শুরুতে সেগুলো প্রকাশিত হলে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এর পরে, মার্কেটের ট্রেডাররা আবারও ফেডের "ডোভিশ" সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস দিতে পারে, যদিও ইতোমধ্যেই জানা গেছে যে পরবর্তী বৈঠকে সুদের হার আরও 0.25% কমানো হবে।
২৩-২৭ সেপ্টেম্বরের জন্য ট্রেডিংয়ের পরিকল্পনা:লং পজিশন: 24-ঘন্টা টাইমফ্রেমে, এই পেয়ার ইচিমোকু সূচকের সবগুলোর লাইনের উপরে ট্রেড করছে, কিন্তু মৌলিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, ইউরোর ক্রমাগত দর বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখনও অত্যন্ত অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। অতএব, আমরা সবসময় এই ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে সন্দিহান ছিলাম। তদুপরি, সাপ্তাহিক টাইমফ্রেম একটি সাইউওয়েজ মুভমেন্ট দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে, ইতোমধ্যেই লং পজিশন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং এখনও তা অপ্রাসঙ্গিক, কারণ এই পেয়ারের মূল্য সাইডওয়েজ চ্যানেলের উপরের জোনে রয়েছে।
শর্ট পজিশন: EUR/USD পেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে, এটি আরও প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হিসাবে রয়ে গেছে। প্রথমত, এই পেয়ারের মূল্য নতুন সাইডওয়েজ ট্রেন্ডলাইনের উপরের সীমানার কাছাকাছি— 1.1274-এর লেভেলে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদে ইউরোর মূল্য বৃদ্ধির কোনো মৌলিক কারণ নেই। তৃতীয়ত, ফেডের মুদ্রানীতি নমনীয় করার বিষয়টি মার্কেটে ইতোমধ্যেই অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে। চতুর্থত, সাপ্তাহিক টাইমফ্রেমের RSI সূচক ওভারবট জোনে প্রবেশ করেছে। যদি এই পরিস্থিতি আরও কয়েক বছর ধরে না থাকে, ডলার হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে শুরু করবে।
চিত্রের ব্যাখা:সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (রেজিস্ট্যান্স/সাপোর্ট), ফিবোনাচ্চি লেভেল - বাই বা সেল অর্ডার ওপেনের টার্গেট। টেক প্রফিট লেভেল এই পয়েন্টগুলোর চারপাশে প্লেস করা যেতে পারে।ইচিমোকু সূচক (স্ট্যান্ডার্ড সেটিংস), বলিংগার ব্যান্ডস (স্ট্যান্ডার্ড সেটিংস), MACD (5, 34, 5)।COT চার্টে ইন্ডিকেটর 1 প্রত্যেক ক্যাটেগরির ট্রেডারদের নেট পজিশনের সাইজের প্রতিনিধিত্ব করে।