আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, গতকাল মার্কিন পুঁজিবাজারে আবারও পতন হয়েছে। এটি সাধারণ মৌলিক দৃশ্যপটের কারণে হতে পারে, যা দৃঢ়ভাবে ও দীর্ঘদিন ধরে ফেডের কঠোর মুদ্রানীতির আভাস দিচ্ছে। অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত আজকের প্রতিবেদনের কারণেও মার্কিন পুঁজিবাজারে পতন হতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভবিষ্যত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এখন মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিই মূল নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে। মনে করে দেখুন যে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্য সূচক বার্ষিক ভিত্তিতে 7.9% বেড়েছিল। এবং আপনার কি মনে আছে যে ছয় মাস আগে, ক্রিস্টিন লাগার্ড এবং জেরোম পাওয়েল সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা করেছিলেন যে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি একটি "অস্থায়ী ঘটনা"? বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এবং বাজারের ট্রেডারদের জন্য "অস্থায়ী" ধারণাটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তনশীল। এক বা অন্যভাবে, মার্চ পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন আজ প্রকাশিত হবে। যদিও ফেড ইতিমধ্যে একবার সুদের হার বাড়িয়েছে এবং QE প্রোগ্রাম বা প্রণোদনা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোক্তা মূল্য সূচক বাড়তে থাকবে। মার্চের মাসে এই সূচক 8.5% হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই হারে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে, আমরা 10% মুদ্রাস্ফীতি দেখতে পারি। এই ধরনের হার পুঁজিবাজারের নতুন পতন ডেকে আনতে পারে, সেইসাথে প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রার বিরুদ্ধে ডলারের নতুন বৃদ্ধিও দেখা যেতে পারে। এখানে যুক্তিটি সহজ: মুদ্রাস্ফীতি যত বেশি হবে, ফেড-এর ব্যবস্থা ততই কঠোর হবে। এবং এক্ষেত্রে অন্য কোন পথ নেই, যেহেতু ফেডারেল রিজার্ভ প্রকাশ্যে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে "এক নম্বর লক্ষ্য" বলে অভিহিত করেছে সেহেতু ফেড মুদ্রানীতি কঠোর করতেই থাকবে। ডলারের ক্ষেত্রে, বাজারের প্রতিক্রিয়া এতটা স্পষ্ট নাও হতে পারে, তবে স্টক সূচকে পতনের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। শুধুমাত্র যদি মূদ্রাস্ফীতি পূর্বাভাসের অনুযায়ী না বাড়ে তাহলে সুদের হার বৃদ্ধি স্থগিত হতে পারে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রেও, ফেড স্পষ্টতই তাদের পরিকল্পনা ত্যাগ করবে না, যেহেতু মুদ্রাস্ফীতি ইতিমধ্যেই যে কোনও ক্ষেত্রেই খুব বেশি বেড়েছে।
পাশাপাশি রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের জরিপও সবার নজরে এসেছে। এই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যে জরিপে অংশগ্রহণ করা 102 জন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে 85 জন বিশ্বাস করেন যে মে মাসে সুদের হার 0.5% বৃদ্ধি পাবে। 102 জনের মধ্যে 56 জন বিশ্বাস করেন যে ফেড জুনে সুদের হারে আরও 0.5% বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে, অনেকেই আশংকা করছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা শুরু হবে। এটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং কঠোর আর্থিক নীতিমালা আরোপের কারণে ঘটতে পারে, যা চাহিদা, উৎপাদন এবং সরবরাহকে আঘাত করবে। প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। হার যত কম হবে, বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ড এবং আমানতের মতো নিরাপদ উপকরণে তাদের সম্পদ বিনিয়োগ করা তত বেশি অলাভজনক। অতএব, তারা শেয়ার ক্রয় করে, যা অর্থনীতিতে বিনিয়োগের একটি প্রক্রিয়া এবং কোম্পানিগুলি এই বিনিয়োগের কারণে তাদের উৎপাদন প্রসারিত করতে পারে। যদি সুদের হার বৃদ্ধি পায়, তাহলে স্টক মার্কেটের বদলে বন্ড মার্কেট এবং ব্যাংক আমানতে বিনিয়োগ প্রবাহিত হয়। অতএব, অর্থনীতিতে বিনিয়োগের প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে, ঋণ প্রদান আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে এবং অর্থনীতি "নিচের দিকে" যাচ্ছে। আগামী মাসগুলিতে, আমরা আমানত এবং বন্ডগুলিতে অর্থের শক্তিশালী প্রবাহের আশা করছি না। কারণ এখন এই ইন্সট্রুমেন্টের ইয়েল্ডের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি কয়েকগুণ বেশি৷ যাইহোক, এটি মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে নিরাপদ সম্পদের চাহিদা বাড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তারা বিশ্বাস করে যে মুদ্রাস্ফীতি 2% এ ফিরে আসার আগে, অর্থনীতি মন্দার দিকে যেতেই পারে।