বিশ্ব রাজনীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রসমূহ পুনর্বন্টন করার জন্য অপরিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক ফিন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের মুল্যের গতিবিধি প্রভাবিত হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের মূলধন রক্ষার নতুন উপায় খুঁজতে বাধ্য করছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিজনিত সম্ভাব্য ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানে বাজারে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের ভীতু এবং আবেগপ্রবণ প্রচেষ্টা দেখছি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা আরো ঐতিহ্যগত সম্পদও বেছে নিয়েছে।
তা সত্ত্বেও, স্বর্ণ-সমর্থিত স্টেবলকয়েন বা মার্কিন ডলারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঐতিহ্যবাহী ফিন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের সম্ভাব্য বিকল্প হিসাবে ডিজিটাল সম্পদ বিটকয়েনের প্রতি বৃহৎ বিনিয়োগের আস্থা বাড়ছে। বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিন অ্যাল্ডেন অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেছেন। এই বিশেষজ্ঞের মতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা রিজার্ভ সম্পদ হিসেবে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট রিজার্ভে বৃহৎ মূলধন এবং সরকারি তহবিলের চাহিদাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। রাশিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এই উদ্যোগ ইউরোপীয় এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দমন করা হয়েছিল। যাইহোক, রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণের রিজার্ভ অবরুদ্ধ করার ঘটনা অন্যান্য দেশের সরকারগুলোকে বিকল্প ক্ষেত্র সম্পর্কে ভাবাতে বাধ্য করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, স্বর্ণ একটি স্থিতিশীল সম্পদ যা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত মূল্য ধরে রেখেছে, কিন্তু, যেকোনো আধুনিক ফিন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের মতো এটি কেন্দ্রীভূত সম্পদ। এ কারণেই রাশিয়ার স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ অবরুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কোনো বেগ পেতে হয়নি।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিটকয়েন নিরাপদ বিনিয়োগক্ষেত্র হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান গুণ ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা নয়, বরং এটি বিকেন্দ্রীভূত মুদ্রা এবং কর্তৃপক্ষের প্রভাব থেকে মুক্ত। অন্য কথায়, বিটকয়েনকে আংশিকভাবে সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে, কিন্তু এই সম্পদ সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করা অসম্ভব। সুৎরাং, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবং তহবিলগুলো তাদের রিজার্ভ পোর্টফোলিও বা পত্রকোষকে বৈচিত্র্যময় করতে বাধ্য হতে পারে। এইসকল কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং তহবিলগুলো সাধারণত ফিয়াট অর্থ বা সোনার উপর বেশি নির্ভর করে।
লিন অ্যাল্ডেন বলেছেন যে অনেক হেজ ফান্ড তাদের রিজার্ভে বিভিন্ন কোম্পানির স্টক বা সরকারি তহবিল ক্রয় করে রাখে। বিটকয়েনের তারল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, রিজার্ভ তহবিলে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করলে মূলধন রক্ষা এবং পাশাপাশি কিছু রিজার্ভ সম্পদের আপেক্ষিক স্বাধীনতা এবং বিকেন্দ্রীকরণের দ্বৈত সুবিধা থাকবে।
এদিকে, বিটকয়েন অবশেষে বুলিশ গতি হারিয়ে, $41,700-এ পৌঁছেছিল এবং পরবর্তীতে $40,200-এ নেমে এসেছে। প্রযুক্তিগত সূচকে দেখা যাচ্ছে যে বিটকয়েনের বুলিশ প্রবণতা গতি হারিয়েছে। RSI সূচক বুলিশ অঞ্চলে যেতে শুরু করেছে, যা স্টকাস্টিক অসিলেটর বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত ছাড়াই ঊর্ধ্বমুখী গতি বজায় রেখেছে। ফেডের সভার আগে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
BTC/USD পেয়ার ট্রেডিংয়ের বর্তমান ব্যপ্তি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং $42,000 এর কাছাকাছি স্থিতিশীল বিয়ারিশ অবস্থানে আসতে পারে। সেইসাথ মূল সুদের হার বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে, এই পেয়ারটি এই রেঞ্জের নিম্ন সীমানা ভেদ করে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই পতন স্থানীয় নিম্নস্তর $34,500 এর কাছাকাছি আসতে পারে, এবং পরবর্তীতে নতুন পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় এবং ভলিউম জমা শুরু হবে।