যুদ্ধ ক্রিপ্টোকারেন্সির চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের তীব্রতা, নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং তেলের দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করছে। ক্রিপ্টো জগত আবারও নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্রের খেতাব ফিরে পেয়েছে কারণ যুদ্ধের সময় আরও বেশি মানুষ তহবিল স্থানান্তর করার জন্য বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহার করছে।

মঙ্গলবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্রতর হয়েছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারগণ কিয়েভের ইউক্রেনীয় জনগণকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া তারা ইউক্রেনের রাজধানীর নিরাপত্তা বাহিনী এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর আরও হামলার সতর্কতা জারি করেছে।

এদিকে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রকেট হামলার তীব্রতা বেড়েছে। উপরন্তু, মার্কিন কর্মকর্তাগণ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে রাশিয়ার সাঁজোয়া যানের কয়েক মাইল দীর্ঘ বহর কিয়েভের দিকে যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ক্রিপ্টো জগত ও স্টক মার্কেটের পারফরম্যান্স একইরকম ছিল, বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। তবে, সপ্তাহের শেষে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার বিটকয়েনের মূল্য আরও 5.5% বেড়ে গিয়ে $45,000 -এ ট্রেড করা হচ্ছে।

ইথেরিয়ামের মূল্যও 5% বৃদ্ধি পেয়ে $3,000 -এ ট্রেড করা হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাশিয়ার উপর আরোপিত সর্বশেষ দফা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির সম্পদগুলোর মূল্য ব্যাপকভাবে পতন হচ্ছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সোমবার রুবল রেকর্ড সর্বনিম্নে পর্যায়ে নেমে এসেছে। ইতিমধ্যে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার 9.5% থেকে বাড়িয়ে 20% এবং মূলধনের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা শুরু করেছে।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা রাশিয়ায় ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক চাপের সূত্রপাত করেছে। রাশিয়ার অধিবাসীরা মস্কোর এটিএম এবং ইউরোপ জুড়ে অবস্থিত রাশিয়ার ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ উত্তোলনের বিশাল লাইন তৈরি হয়েছে।

গত সপ্তাহে, ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও জানিয়েছে যে তারা ডিজিটাল অর্থ স্থানান্তর স্থগিত করছে এবং নগদ অর্থ উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

গ্লোবালব্লকের বিশ্লেষক মার্কাস সোটিরিউর মতে, এই নিষেধাজ্ঞাসমূহ চলমান থাকায় মানুষ তহবিল স্থানান্তর করার জন্য আরও বেশি বেশি বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকছে।

এই ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা টুইটারে অনুদানের জন্য অনুরোধ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং টিথারের অনলাইন ওয়ালেটের ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্লকচেইন ট্র্যাকিং কোম্পানি এলিপটিকের তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ইউক্রেন $30 মিলিয়নেরও বেশি মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুদান পেয়েছে।

ক্রিপ্টো ডেটা কোম্পানী কাইকো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার রুবল এবং ইউক্রেনীয় রিভনিয়াতে পরিচালিত বিটকয়েন এক্সচেঞ্জের লেনদেন বহু মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সামনেও, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালকের আসনে থাকবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের আর্থিক নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপ বিটকয়েনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।