GBP/USD. ব্যাংক অভ ইংল্যান্ডের ফেব্রুয়ারির বৈঠক, ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.টু, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব হার হ্রাস সংক্রান্ত পর্যালোচনা।

কয়েক কার্যদিবস ধরেই রেসিস্ট্যান্স লেভেল ভেদ করে GBP/USD পেয়ারের দাম বেড়ে চলেছে। গত শুক্রবার থেকে, পাউন্ড ধীরে ধীরে গতিশীল হয়ে হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ে, এই পেয়ার 1.3364-এর স্তর থেকে স্থানীয় উচ্চতা 1.3587 স্তরে উঠে 200 পয়েন্টেরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও, ক্রেতারা 1.36 স্তরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সাহস পাননি। বৃহস্পতিবারের এশিয়ার সেশন চলাকালীন সময়ে, এই পেয়ার সাপ্তাহিক উচ্চতম স্তর থেকে বিদায় নেয় এবং 1.3550 স্তরের কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করেছে। শুধু যে ডলার সূচকের পতন কমেছে তা নয়: পাউন্ডের বাজারও ব্যাংক অভ ইংল্যান্ডের ফেব্রুয়ারির বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছে, যার ফলাফল আজ বিকেলে ঘোষণা করা হবে।

সাধারণভাবে, ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে হকিশ বা কঠোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্সের বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক 2022 সালের শেষভাগ পর্যন্ত তিনবার সুদের হার বাড়াবে। তাছাড়া, প্রথমবার 25 বেসিস পয়েন্টের বৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। তবে, শুধুমাত্র জিএসের মুদ্রা কৌশলবিদরাই আজকে কঠোর মুদ্রানীতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলছেন না, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা ফেব্রুয়ারির বৈঠকের পরে সুদের হারের 0.5% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। GBP/USD পেয়ারের বাজার ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে, এবং এটি বাস্তবায়িত না হলেই বরং এই পেয়ারের জন্য শক্তিশালী অস্থিরতা বয়ে আনতে পারে। যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনও এক্ষেত্রে বাজারের প্রত্যাশা পূরণ করে, পাউন্ড কিছুটা সমর্থন পাবে। তবে, GBP/USD পেয়ারের সম্ভাবনা নির্ভর করবে কিউই বা প্রণোদনা কর্মসূচীর ব্যাপারে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের বক্তব্য এবং আর্থিক নীতিমালা কঠোর করার গতির উপর।

মূল হকিশ বা কঠোর প্রেক্ষাপটে তিনবার সুদের হার বৃদ্ধি (ফেব্রুয়ারি, মে, আগস্ট), কিউই প্রোগ্রাম বা প্রণোদনা কর্মসূচীর অধীনে পুনঃবিনিয়োগের সমাপ্তি এবং শরৎকালে (অক্টোবর-নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া ব্যালেন্স শীট থেকে সিকিউরিটিজ বিক্রির ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। যদি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই সকল পদক্ষেপের অন্তত একটি থেকেও পিছু হটে, তবে আজকের বৈঠকে সুদের হার বৃদ্ধি সত্ত্বেও পাউন্ড কিছুটা চাপের মধ্যে থাকতে পারে।

হকিশ বা কঠোর প্রেক্ষাপটের বেশ অনেকগুলো মৌলিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির রেকর্ড। এছাড়াও বার্ষিক ভিত্তিতে সামগ্রিক ভোক্তা মূল্য সূচক প্রায় 5.4%-এর ব্যাপক বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। এটি প্রায় গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর, যেরকমটি সর্বশেষ মার্চ 1992 সালে দেখা গিয়েছিল। মূল মুদ্রাস্ফীতি একইরকম গতিশীলতা দেখিয়েছে। মূল ভোক্তা মূল্য সূচক 4.2% বেড়েছে।

ব্রিটেনের শ্রমবাজারও হতাশাজনক ছিল না। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে বেকারত্বের হার 4.1% -এ নেমে এসেছে, সেইসাথে বেকারভাতার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা 43 হাজার কমেছে। তবে, একটি সমস্যা আছে। সেটি হচ্ছে গড় আয়ের স্তর হ্রাস পেয়েছে (বোনাস সহ এবং ছাড়া উভয় ক্ষেত্রে)। কিন্তু সাধারণভাবে, প্রকাশিত প্রায় সবগুলো সূচকই "গ্রিন জোনে" ছিল, যা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর, ফেব্রুয়ারী মিটিংয়ে সুদের হারের প্রায় নিশ্চিত বৃদ্ধির ফলে বাজার আগে থেকেই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রদর্শন করতে শুরু করে। কিন্তু 200 পয়েন্ট উপরে যাওয়ার পর ট্রেডাররা থেমে যায়। সম্ভবত তারা ভেবেছিল যে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড পাউন্ডকে অতিরিক্ত সমর্থন দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি বাজারের উচ্চ প্রত্যাশার সাথে তাল মেলাবে? এই উত্তরহীন প্রশ্নই ব্রিটেনের মুদ্রার উর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ করে দেয়। আজকের এশিয়ার সেশনে GBP/USD পেয়ার প্রায় 40 পয়েন্ট কমেছে। আমরা ধারণা করছি যে ট্রেডারদের সন্দেহ একবারে ভিত্তিহীন নয়।

ওমিক্রন ধরনের নতুন এবং আরও বেশি সংক্রামক সাব-ভেরিয়েন্ট, বিএ.টু, এখন যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র জানুয়ারির প্রথম দশ দিনে অন্তত ৪০০ জন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং যদিও ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় কম ক্ষতি বয়ে আনে (যা বিএ.টু সাব-ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য), নতুন এই ধরন এখনও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিপজ্জনক। বিশেষ করে, গতকাল ব্রিটেনে কোভিড-১৯ এর আক্রান্ত হয়ে 534 জন মৃত্যুবরণ করেছে যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত দিনে 88 হাজারের বেশি জনগণ করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রিটিশ হেলথ সেফটি এজেন্সির অনুসন্ধান অনুসারে, যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়বে কারণ বিএটু সাব ভ্যারিয়েন্ট মানুষকে পুনরায় সংক্রমিত করার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপ্সহি, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন এটির মূল ধরনের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন পরিবারের কেউ বিএওয়ান ধরনের দ্বারা সংক্রমিত হয়, তবে 30% সম্ভাবনা থাকবে যে পরিবারের বাকি সদস্যরাও এতে আক্রান্ত হবে। তবে বিএটু এর জন্য এই সূচক ইতিমধ্যেই এক তৃতীয়াংশ বেশি।

যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ বর্তমানে পুনরায় লকডাউনের বা কোনো অতিরিক্ত কোয়ারেন্টাইন বিধিনিষেধ নিয়ে কোন কথা বলছে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের সাথে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সদস্যদের সিদ্ধান্তকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, এমন প্রেক্ষাপটের সম্ভাবনা রয়েছে যেখানে একদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আজকের বৈঠকের ফলাফলের ভিত্তিতে সুদের হার বাড়াবে, কিন্তু অন্যদিকে, বাজারসমূহ সুদের হার বৃদ্ধিতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। ফলে ব্রিটিশ মুদ্রা খুব বেশি উর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রদর্শন করবে না।

সুতরাং, সুদের হারের বৃদ্ধিসহ ব্যাংক অভ ইংল্যান্ডের আজকের বৈঠকের ফলাফল GBP/USD ক্রেতাদের অসন্তুষ্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে, নিম্নমুখী প্রবণতা ব্যবহার করে GBP/USD পেয়ারের লং পজিশন খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। এই মুহূর্তে, ফলাফল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা এবং অপেক্ষা করার মনোভাব পোষণ করা উচিৎ।I